মার্কেটিং হচ্ছে সফলতার মন্ত্র

জাদু- মন্ত্র একটি পুরোনো কাহিনী আর সেই কাহিনী আমাদের অতি পরিচিত। আমরা এটিতে অব্যস্ত। তাই যখন ই আমাদের কাছে এই জাদু বা মন্ত্র নিয়ে কোন বিশেষ কিছু উপস্থাপন করে, তখন আমাদের কাছে সেটি একটি আজগুবি জিনিস মনে হয়ে থাকে। আর মনে হয় এই জাদু দিয়ে বা মন্ত্র দিয়ে মনে হয় সকল অসম্ভব জিনিস সম্ভব করা যায়, আবার এটি আমাদের সবকিছু করে দিতে পারে, অর্থাৎ আমাদের মনে হয় যেন জাদু দ্বারাই সকল কিছু করা সম্ভব।

ঠিক আজ আমরা এই একই রকমের একটি জাদু সমন্ধে আমরা কথা বলবো, যেখানে আমরা সফলতার একটি জাদুর মতো বা মন্ত্র নিয়ে আলোচনা করবো। যে জাদু দ্বারা আমরা আমাদের ক্যারিয়্যারের যে কোন অধ্যায়কে নিয়ে উর্ধতম স্থানে পৌছাতে পারি।

ক্যারিয়্যারে মার্কেটিং কেন প্রয়োজন

ক্যারিয়্যার বলতে সেই কাজকে বোঝায়, যেখানে আমাদের দক্ষ্যতা রয়েছে একই সাথে সেই দক্ষ্যতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা জীবিকা উপার্জন করতে পারি। অর্থাৎ আমাদের জীবিকা অর্জনের মাধ্যমকেই আমরা সহজ ভাষায় ক্যারিয়্যার বলি।

এবার ক্যারিয়্যার অনেক কিছুর ভিত্তিতে হতে পারে, যেমনঃ চাকুরি, লেখালেখি, বিশেষ কোন কাজের দক্ষ্যতা ইত্যাদি বা কখনো কখনো কৃষি কাজ করার মাধ্যমেও হতে পারে। এক্ষেত্রে অনেকে বলবে, এখানে কেন প্রয়োজন আমার মার্কেটিং। দেখুন আমরা যে কাজেই পারদর্শী হই না কেন, সেটি সমন্ধে যদি অন্যদের না জানাতে পারি, তাহলে কখনোই আমরা সেই কাজের সর্বোচ্চ ব্যবহারের সুযোগ পাবো না।

আপনি ধরনে নেন কৃষি কাজে দক্ষ, এখন যদি এটা কেউ না জানে, তাহলে তো আপনার উৎপাদিত শস্য়গুলো কম টাকায় বিক্রি করা লাগতে পারে। আর যখন কেউ জানতে পারবে যে, আপনার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সার-ওষুধ প্রয়োগের ফলে যে শষা হয়েছে অথবা যে সবজি হয়েছে সেটি যথেষ্ট পরিপুষ্ট এবং সেটি খেতেও সুস্বাধু। তখন সেটির ডিমান্ড বেড়ে যাবে, দূর দূরান্ত থেকে সেটি কেনার জন্য ক্রেতার আগমন হবে আবার একেবারে খারাপ শস্যটাও বিক্রি হয়ে যাবে।

আরো ভালো কথা হলো, আপনাকে বিক্রি করার বিষয়ে তেমন চিন্তা করতে হবে না।

অপর দিকে আমরা যদি এভাবে দেখি, আপনার সার ওষুধের খরচও সামান্য বেশি গেল। আর ফসল ও পর্যাপ্ত ভালো হয়েছে কিন্তু আপনি সেটি কাউকে জানান নি, এক্ষেত্রে আপনার জমিতে গিয়ে তো আর সবাই পরিক্ষা করে দেখতে যাবে না। তাই ক্রেতারা অন্যদের কাছে সামান্য কম মূল্যে পেয়ে সেখান থেকে কিনে নিতে সাচ্ছন্দ বোধ করবে।

ঠিক চাকুরির ক্ষেত্রেও যখন আপনার দক্ষতাকে জানতে পারবে, তখন আপনাকে উচ্চ পদের জন্য আমন্ত্রন জানাবে আপনাকে প্রমোশন করবে, কিন্তু আপনি যদি সেটি কাউকে বুঝতেই না দেন যে, আপনার আরো দক্ষতা রয়েছে, তাহলে কিভাবে আপনার সমন্ধে তারা জানতে পারবে।

মার্কেটিং আসলে কি

মার্কেটিং হচ্ছে প্রচার, যেখানে কথা, কাজ, ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে যে কোন জিনিসের ভালো বিষয়ে সবার কাছে তুলে ধরা। বর্তমানে মার্কেটিং সমন্ধে কথা এলেই আমাদের কাছে যেন ডিজিটাল উপায়ে ভিডিও, ফটো তৈরি করে সেটি অনলাইে বা অফলাইনে প্রচার করাকে বোঝায়, কিন্তু এটি-ই আসলে মার্কেটিং এর সিমাবদ্ধতা নয়।

আমরা এভাবে চিন্তা করতে পারি, যখন একটি স্কুলের ভর্তির জন্য মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট, ব্যনার সহ ইত্যাদি তৈরি করে প্রচাার করে, তখন ও সেখানে স্টুডেন্ট বাড়তে শুরু করে, আর সেটি এক প্রকারের মার্কেটিং হয়।

আবার যখন সেখান থেকে কোন অনুষ্ঠান করা হয়, বা সেখান কার স্টুডেন্টদের বিশেষ কোন কম্পিটিশনে নেওয়া হয় আর সেখান থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়, সেটিকেও মার্কেটিং বলে। অর্থাৎ তখনও সেখানকার শিক্ষার্থী বাড়তে থাকবে। আবার যদি সেখানকার কাজ ভালো হয়, অর্থাৎ সেখনকার শিক্ষার্থীরা ভালো পর্যায়ে যেতে পারে, তখনও সেটি এক ধরনের মার্কেটিং হয়, যা সেখানকার কাজে উন্নতি করতে পারে।

মার্কেটিং যদি প্রপার ভাবে বোঝা যায়, তাহলে কানাঘষায় ও তার প্রচার করতে পারা সম্ভব। অর্থাৎ সময় বুঝে লোকের মুখে ছুড়ে দিলে, লোকে লোকে নিজেরাই সেটি প্রচার করে দেয়।

যেমন সেই স্কুলের ই একটি ভালো কাজে, যা অন্য স্কুলের দ্বারা এখনো সম্ভব হয়নি ( হতে পারে ,সেটি একদম নিম্ম পর্যায়ের কোন কাজ) তবে সঠিক সময়ে এটি মানুষের মুখে ছুড়ে দিতে পারলেই সেটি রাতারাতি ছড়িয়ে যাবে ফলে সবার কাছে সেই স্কুলের সমন্ধে পৌছে যাবে। এটি এমন হতে পারে যে, কোন একটি নতুন স্টুডেন্ট কোন কারনে ক্লাস রুমে অসুস্থ বোধ করলো, তাকে তাৎক্ষনিক ভাবে ভালো ডাক্তারের কাছে নেওয়া হলো। এটি সাভাবিক হলেও এটি রাতারাতি সবার কানে পৌছাতে পারে।

মার্কেটিং এর সুফল

কোন একজন বিশেষঞ্জ বলেছিল, তুমি টাকা বাচাতে মার্কেটিং করলে না, মানে তুমি ঘড়ি বন্ধ রেখে সময় বাচানোর চেষ্টা করে গেলে। এটি বাস্তব একটি অভিজ্ঞতা। আপনি যদি মার্কেটিং করার জন্য কাউকে এক কাপ কফি খাওয়ান, সেটি আপনার কোন না কোন একটি সুফল তৈরি করবেই। পক্ষান্তরে আপনি এক কাপ কফি খাওয়ানোর ভয়ে যদি কাউকে মার্কেটিং করার সুযোগ পেয়েও তা এড়িয়ে চলে যান, সেটি আপনাকে কোন সেই কফির দামের চেয়েও বেশি টাকা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।

মার্কেটিং হচ্ছে মেরুদন্ড, যা কোন প্রতিষ্ঠান কে দাড় করিয়ে রাখে। যখন ই মার্কেটিং এর খারাপ রেজাল্ট আসতে থাকবে বা মার্কেটিং প্রপার হবে না, তখন ই সেই কোম্পানী তার মেরুদন্ড হারিয়ে ফেলবে, যা তাকে শূন্যে নামাতে মূহূর্ত সময় নিতে পারে।

ধরে নেন হাজার হাজার কলমের কোম্পানি রয়েছে, এর মধ্যে আমরা আকর্ষনীয় লুকে আরএফএল এর গুড লাক কলম কে দেখতে পেয়েছিলাম। সুন্দর লুক আর খুব স্মুথ হওয়ায় সেটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল, এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, তারা তো মার্কেটিং করেছিল না তেমন। উত্তর হচ্ছে, তাদের কোম্পানির মার্কেটিং এর সাথেই তারা জনপ্রিয়তায় চলে গেছিল, আর স্মুথ এবং লুকের জন্যই তারা বাজার দখল করেছিল।

তখন ম্যাটাডর কোম্পানি তাদের একটি ক্ষুত ধরতে চেষ্টা করে, আর সফল হয়। অর্থাৎ গুড লাক তাদের কলমে কালির পরিমাণ কমিয়ে সেই টাকা লুকিং এর পেছনে খরচ করেছিল। এটি মাটাডোর ভালোভাবে ধরে ফেলে, ফলে তারা সেটি প্রকাশ করার জন্য বিশেষ কিছু মাধ্যম খুজেছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল , তারা বাইরে থেকে কালি দেখার একটা রেখা যুক্ত করে তাদের কলমে।

এই সামাণ্য কারনে, গুডলাকের সেই পন্যটি মাত্র অল্প সময়ের মধ্যেই বাজার ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। কারন তারা ভুল মার্কেটিং করেছিল, তারা লুকিং এর উপরে বেশি ফোকাস দেয়, আর ব্যবহার কারীরা আসলে কালির পরিমাণ বেশি খুজেছিল। সেই সাথে সুযোগে মাটাডোর পয়েন্ট মতো তাদের পন্যের সামান্য একটি ভালো গুন সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয় যা তাদের কোম্পানিকে শীর্ষে ফেরাতে পারে আর বাজার দখল করা পন্যকে বাজার ছাড়া করে।

এখানে দুটো কাজই মার্কেটিং এর মাধ্যমে হয়েছি। তাই আমরা এই অংশে এটি মার্কেটিং এর একটি বিশেষ চিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। আর ম্যাটাডোর কোম্পানির জন্য এটি সুফল হিসেবে ধরে নিতে পারি।

যখন আপনি কোন পন্যের মার্কেটিং করতে পারবেন, তখন আপনি সেই পন্যটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছাতে পারেন। তবে যদি মার্কেটিং না করেন তাহলে, সেই হজার হাজার কলমের কোম্পানি যেগুলো এখনো আমাদের পর্যায়ে আসতে পারেনি, সেগুলোর মতোই লুকিয়ে থেকে যেতে হবে।

মার্কেটিং এর পতন কেন

শুধু মার্কেটিং থাকলে হবে না। যেমন আমাদের আত্মা, মস্তিস্ক থাকার পরে সেগুলো প্রপার কজ করলে তখই আমাদের মেরুদন্ডের প্রয়োজন হবে দেহকে দাড় করাতে। ঠিক তেমন ই যদি আপনার পন্য ভালো না হয়, পন্যের লেনদেন ভালো না থাকে, তাহলে শুধু মার্কেটিং ক্ষতির কারন ও হতে পারে।

গুড লাকের কলমের যেমন পন্যের ভুল ছিল, সেই দূর্বলতার সুযুগে অন্য কেউ তার ভালোটা স্থাপন করেছিল, ঠিক আপনার মার্কেটিং এর সামান্য ভূল আসলেই সাথে সাথে সেটি আমলে নিয়ে তার প্রতিরোধ করে নিবেন, না হয় তো সেটি খারাপ পর্যায়ে পৌছে দিবে।

যদি আপনি সঠিক ভাবে মার্কেটিং করতে ব্যার্থ হন, তাহলে কনফর্ম আপনাকে ক্ষতির সম্মুক্ষীন হতেই হবে।

কখনো কখনো আমপনার অজান্তেই কেউ আপনার কোম্পানি বা পন্যের বা কাজের বদনাম করতে পারে, যদি তার কাজের বা পন্যের জন্য মার্কেটিং। এটি রুখে দিতে াপনি তার বিরুদ্ধে ক্ষতিকর পদক্ষেপ ( হাতাহাতি, রাগারাগি, আইননী ব্যবস্থা) না নিয়ে মাথা খাটিতে তাকে ধরা দিন। আর তার করা মার্কেটিং এ থাকা খারাপ বিষয়ে ঠিক করে সবাইকে সেটি জানিয়ে দিন, এবং সামান্য টাকা খরচ করলেই তার মার্কেটিং আর আপনার সামান্য টাকা আপনার পন্যের বিশাল রাজত্ব তৈরি করে দিবে।

মার্কেটিং এর ক্ষতি কখন হবে

শুধু যে উপকার হবে, তেমন নয় কিন্তু। কখনো কখনো আপনার ক্ষতির সামনেও দাড়াতে হতে পারে। তবে সেই কঠিন সময়ে শক্ত হয়ে দাড়াতে হবে। কেননা এটি আপনাকে পতনে ফেলবে, যদি আপনি তখন দাড়িয়ে থাকতে পারেন। তাহলে টিকে থাকবেন, যদি হাল ছেড়ে দেন তো লস ছিলো তার সাথে সব শেষ হয়ে যাবে।

আংশিক লস সবার ই থাকে। যদি সেই গুড লাকের সেই সময়ের কথা নিয়ে ভাবেন, তখন তারা লক্ষ লক্ষ টাকার পন্য হয়তো তৈরি করে রাখছিলো। কিন্তু রাতারাতি ধস নামায় টিকে থাকাও কঠিন হয়। বিশেষ করে আমাদের মতো ছোট ছোট উদ্যোগতারদের জন্য। তবে তখন টিকে থাকলে হয়তো ভবিশ্যতে আবার দাড়াতে পারবেন, তাই তখন টিকে থাকা ছাড়া কোন অপশন ই থাকবে না।

সেই সাথে আপনাকে এটি মাথায় রাখতে হবে যে , এই সময়ে আপনার প্রপার শক্ত হতে হবে আর সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে। লস তো এমনিতেও আসবে, যদি নিজে থেকে সামান্য লস দিয়ে উঠে দাড়ানো যায়, তাহলে সেটিই করুন।

এটি না পারলেই আপনি মার্কেটিং এর ক্ষতিকর একটা যুগের সাথে দেখা করে থাকবেন। যা আপনার জীবনের জন্য একটি কালো অধ্যায় এটি আপনাকে প্রতিবন্ধি বানিয়ে রাখতে পারে, অর্থাৎ হয়তো আআর কোন দিনও উঠে দাড়াতে পারবেন না, আর পারলেও সাহস হবে কি না সেটিও একটি বিষয়।

মার্কেটিং এর প্রপার ওয়ে

মার্কেটিং করতে হলে প্রাথমিক ভাবে মার্কেট সমন্ধে জেনে নিতে হবে। যদি মার্কেট সম্পর্কে সঠিক তথ্যা না পাওয়া যায়, তাহলে কখনোই মার্কেটিং ভালোভাবে করতে পারবে না। মার্কেট সম্পর্কে যত ভালো ভাবে বোঝা সম্ভব, মার্কেটিং এ ও তত ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

তাই মার্কেটে পন্যকে পুশ করা শিখতে হবে আর মার্কেটের চলমান সঠিক তথ্যকে জেনে নিতে হবে। তাহলেই সম্বব খুব ভালোভাবে ফলাফল পাওয়া যাবে।